শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান:
ভারত সীমান্তবর্তী সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গরু চোরেরা। তাদের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকার মানুষ। প্রতিরাত্রে সংঘবদ্ধ হানা করে চোরের দল।
গত কয়েক মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক গরু চুরি হয়েছে এতদঞ্চল থেকে। গভীর রাতে গোয়াল ঘর থেকে গরু চুরি করে নম্বরবিহীন ট্রাক, পিকাপ, সিএনজিতে উঠিয়ে নিয়ে যায় চোরেরা। আর এসব ঘটনায় খুব কম সংখ্যক মামলার রেকর্ডভুক্ত হয়। ভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিকার না পাওয়া প্রশাসন কে অভিযোগ দিয়ে ও প্রতিকার পাচ্ছে না। ফলে চোরের দল পার পেয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশের নজরদারির অভাবে এবং বিচারকার্যে ছাড় দেওয়ার কারনে প্রতিনিয়ত গরু চোরি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নরসিংপুর ইউনিয়নের সাধারণ ছাত্র সমাজ বলেন, তাদের কাছে অনেক চুরির অভিযোগ আসতেছে, প্রতি রাতে গোয়ালা ঘরে চোর হানা করে। যারা গৃহপালিত পশু লালন পালন করে তাদের রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। এবং আমাদের নরসিংপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা জীবিকা নির্ভর প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে গবাদিপশু ও কৃষিকজ। তারা গরুর দুধ বিক্রি করে পরিবারের যোগান দেয়। কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো গরু দিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে। যখন তাদের মূল্যবান গরু চুরি করে নিয়ে যায় তখন হতদরিদ্র এসব পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যক্তিরা জানান, দিনে দুপুরে মাঠ থেকে ও গোয়ালা ঘর থেকে রশি কেটে গরু গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। রাতে গাড়ির ভেতরে গরু দেখলে আটক করতে ভয় পায় সাধারণ জনগণ। কারণ পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়। ফলে কাউকে আটক করা হয় না। যে কারণে সহজে পার পেয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরের দল। গত কয়েক মাস ধরে নরসিংপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় অর্ধশত গরু চুরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে গরু চুরির একটি গোপন ঘর উন্মোচিত হয়েছে। লোক মুখরিত ‘আয়না ঘর’ নামে পরিচিত। আয়না ঘরে চোরেরা চুরি করা গরু এনে লুকিয়ে রাখে। স্থানীয় অনেক শিক্ষার্থীর দাবি এলাকার প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে চুরির কার্যক্রম চলছে, সাধারণ আমজনতার জন্য বিশাল এক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাবশালীদের কারণে চোর চিহ্নিত হওয়ার পরও বিচার হচ্ছে না।
স্থানীয় বাকপ্রতিবন্ধী ভুক্তভোগী নুরজাহান বেগম, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতার মাধ্যমে ১টি গরু ক্রয় করেছিল অভাবের সংসারে উন্নতির জন্য। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সে রক্ষা পায় দুর্বৃত্ত চোরদের কাছে থেকে।
ইতিমধ্যে দোয়ারাবাজার থানায় চোরির অভিযোগ দ্বীনেরটুক গ্রামের ভুক্তভোগী বাকপ্রতিবন্ধী নুরজাহানের মা কাছামালা (৫৪) গত ২ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ দোয়ারাবাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের নাম্বার [৪৩৩]।অভিযুক্ত আসামিরা :- তাজিল ইসলাম (২৯), পিতা: মৃত আব্দুল হক ও সেবুল মিয়া (৪০), পিতা: মৃত হাবিব উল্লাহ; সাজু (২৪ পিতা: সানোয়ার হোসেন এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজন কে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
দায়েরকৃত অভিযোগে কর্তব্যরত অফিসার ভুক্তভোগী কাছামালা কে আশ্বাস প্রদান করেন আগামীকাল একজন অফিসার গিয়ে তদন্ত করবে এবং আইনগত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কিন্তু ৫ ই সেপ্টেম্বর অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রশাসন নিরবে বসে আছে নেই তাদের কোন পদক্ষেপ। এখানে স্থানীয় সকল সচেতন নাগরিকেরা প্রশাসনের প্রতি এই চোরদের আইনের আওতায় এনে যথা উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।