রুয়েব আহমেদঃ শান্তিগঞ্জ
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ছয়হাড়া সেতুর টোল আদায় থেকে দীর্ঘ বছরের পর মুক্তি পেয়েছে জনগণ। বছরের পর বছর ধরে টোল আদায় অব্যাহত থাকায় মানুষের মধ্যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এবার শেষ হলো এই খেলা। অবশেষে শ্রমিকরা বন্ধ করে দিলেন ছয়হাড়া সেতুর টোল আদায়। গত রোববার থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এই কার্যক্রম করেন। জানা যায়, রোববার শান্তিগঞ্জ উপজেলা ট্রাক উপ-কমিটি পাগলা বাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদু রহমান সাজাদ এর সাথে টোল আদায় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয় টোল আদায়কারীদের। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাড়তি ৫০ টাকার জন্য সাজাদের গায়ে হাত তুলতে আসেন ইজারাদারের নিয়োগকৃত কর্মীরা। এবং তাকে ড্রাইভিং সিট থেকে নামিয়ে টানা হেচড়া করে টোল আদায়ের কক্ষে আটক করে রাখা হয়। পরে খবর পেয়ে পাগলা বাজারের সর্বস্তরের পরিববহন শ্রমিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় সুনামগঞ্জ জেলার সকল পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্ধ বিষয়টি নিয়ে পাগলা বাজারে বসে টোল আদায়ের চার্ট দেখতে চাইলে ইজারাদার তা দেখাতে না পারায় তারা টোল দেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন থেকেই বিনা টোলে বিভিন্ন শ্রেণীর যানবাহন চলছে। এদিকে দীর্ঘবছর পর ছয়হাড়া সেতুতে টোল আদায় বন্ধ হওয়ায় স্বস্থি প্রকাশ করেছেন পরিবহন শ্রমিকসহ স্থানীয় জনসাধারণ। সিএনজি চালক মিসবাহ বলেন, টোল আদায় বন্ধ হওয়ায় ভালো লাগছে। শুধু আজই নয় সবসময়ের জন্যই এই সেতুর টোল আদায় বন্ধ হওয়া উচিত। একাধিক ট্রাক চালকরা বলেন, অনেক সময় বাড়তি টোলও নিয়েছেন ইজারাদাররা। তাদের আচরণও খুবই খারাপ। টোল আদায় বন্ধ হওয়ায় স্বস্থি লাগছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা ট্রাক উপ-কমিটি পাগলা বাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক ভুক্তভোগী সাজ্জাদু রহমান সাজাদ বলেন, মিনিট্রাকের টোল ৭৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও যাওয়া এবং আসার টোল ১ শত ৫০ টাকা হলেও দীর্ঘ বছর যাবৎ তারা ২ শত টাকা করে নিচ্ছেন। বাড়তি টাকা না দিতে চাইলে ইজারাদার ও তাদের নিয়োগকৃত লোকরা আমার উপর হামলা চালিয়ে আমাকে আটক করে। শান্তিগঞ্জ উপজেলা ট্রাক-পিকআপ শ্রমিক উপ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বলেন দীর্ঘ বছর ধরে ছয়হাড়া সেতুতে দিগুন হারে টোল দিয়ে আসছেন শ্রমিকরা। এতে ক্ষুব্ধ তারা। গত রবিবার টোল প্লাজায় আমাদের এক শ্রমিককে তারা মারধর করে আটকে রাখলে সে আমাদের ফোন করে জানায়। পরে আমি সহ শ্রমিক নেতা মখদ্দুছ, আমির উদ্দিন, আব্দুস সামাদ,হিরণ মিয়া, আবির শাহ ওবায়দুল্লাহ সহ পাগলা বাজারের সর্বস্থরের পরিবহন শ্রমিকগন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পাগলা বাজারে নিয়ে আসি এবং পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্ধের সিদ্ধান্ত নেন ছয়হাড়া সেতুতে আর কোন টোল দেয়া হবে না । আমরা আমাদের জেলার নেতাদের জানিয়ে এই টোল আদায় বন্ধ করেছি। যদি আর টোল আদায় করার পায়তারা করা হয় আমরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো।
সুনামগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংক,লড়ি,কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে এই সেতুতে শ্রমিকদের কাছ থেকে বাড়তি টোল আদায় করা হচ্ছে। আমরা বার বার অনুরোধ করার পরও তারা জোর পূর্বক বাড়তি টোল আদায় করে আসছেন। গত রবিবার বাড়তি টোলের জন্য তারা আমাদের এক ট্রাক শ্রমিককে মারধর করে আটকে রাখে। পরে সর্বস্তরের শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে পাগলা বাজারে নিয়ে আসেন। এরপর জেলার সকল শ্রমিক সংগঠনক ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐ সেতুর টোল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। যেহেতু পার্শবর্তী ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে রানীগঞ্জ সেতুতে টোল আদায় করা হয় সেহেতু ছয়হাড়া সেতুতে টোল আদায়ের কোন যৌক্তিকতা নেই। আমাদের দাবী কর্তৃপক্ষ যেন এই সেতুতে চিরস্থায়ীভাবে টোল আদায় বন্ধ করে দেন।
এ ব্যাপারে টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা জালাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি চার্ট মোতাবেক টোল আদায় করছি। শ্রমিকরা টোল আদায়ের বিষয়ে বাঁধা দেওয়ায় আমরা টোল আদায় বন্ধ রেখেছি।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা জানান, ইজাদারদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আগামীকাল উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসবো।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ছয়হাড়া সেতুটি সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে কেউ চাইলেই টোল আদায় বন্ধ করতে পারবে না। টোল আদায়ের নির্ধারিত চার্ট দেওয়া আছে, তবে তারা যদি বাড়তি টোল আদায় করেন বিষটি আমরা খতিয়ে দেখব।