মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
শান্তিগঞ্জে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু শান্তিগঞ্জে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষক দিয়ে পিআইসি কমিটি গঠনের অভিযোগ  শাহজালাল রঃ একাডেমি’র বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও ৫ম শ্রেণি শিক্ষার্থীদের বিদায়ী সংবর্ধনা  শান্তিগঞ্জে জনসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ  সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে শান্তিগঞ্জে সেমিনার সুনামগঞ্জে কিশোরকণ্ঠ মেধাবৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ জয়কলস ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে বিএনপির কর্মীসভা শান্তিগঞ্জে বিপুল পরিমান ভারতীয় পণ্যসহ গ্রেফতার ২ ইংলিশ টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইউকে শাখার আহবায়ক সুনামগঞ্জের নয়ন হতদরিদ্রদের মাঝে আমেরিকা প্রবাসীর ঢেউটিন ও পাকা পিলার বিতরণ

টেস্ট ক্রিকেটে ২৪ বছর এবং আমাদের একজন গুল্লু ভাই!

সুনামগঞ্জের দিনকাল ডেস্ক:
  • সংবাদ প্রকাশ : রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৭ Time View

 

সামিউল কবির:

শিরোনাম দেখে অনেকেরই মাথায় সড়কগাছ, টেস্ট ক্রিকেটে এতো বছরে মাত্র ১ জন গুল্লু ভাই?  বিষয় টা আরেক টু ক্লিয়ার করি আমি বলতে চাই।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রবাদপ্রতীম এক চরিত্র জাভেদ ওমর বেলিম এর কথা। যার ডাক নাম গুল্লু। তার ধীরগতির ব্যাটিং রান তোলা, গ্রামাটিকালি বল ছেড়ে দেয়ার জন্যই বেশি আলোচিত। তিনি আমাদের বুঝিয়েছিলেন যে, পরিশ্রম শুধু ঘাম ঝরিয়েই হয় না, একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আগানোর জন্য প্রয়োজন হয় যথাযথ চিন্তা, প্রক্রিয়া ও প্রয়াসের মিশ্রণ। অনেক সময় সাংবাদিকরা ভুল করে পত্রিকাতে তার নাম গুল্লুর পরিবর্তে গোল্লা লিখে ফেলতেন, সরলমনা জাবেদ ওমর বেলিম তাদের বলতেন – ভাই, আমি গোল্লা নয় আপনারা লিখেলে গুল্লু লিখবেন। প্লীজ!

হ্যাঁ আমাদেরও ছিলেন একজন জাভেদ ওমর গুল্লু তিনি আধুনিক ক্রিকেট যান কিনা সে প্রশ্নে যাবো না। গুল্লু ভাইয়ের মতো টেম্বারমেন্ট, ধৈর্যশীল আর কমিটমেন্ট ওয়ালা ব্যাটারের আজ বড় অভাব এই দলে।

মুলতান টেস্ট ২০০৩, পাকিস্তানের বিপক্ষে মাটি কামড়ে জাভেদের সেঞ্চুরি আমাদের এই শিক্ষা বা জানান দেয় যে ধৈর্যশীলদের সাথে স্বয়ং আল্লাহ পাক থাকেন। তখনকার সবগুলো পত্রিকা জাবেদের এই বীরোচিত সেঞ্চুরি এমনভাবে শিরোনাম করেছিল ”মুলতানে জেদি জাভেদের জয়” এমন শিরোনামে দেখলে কার না ভালো লাগতো। অথচ দেশে ২৪ বছরেও আমরা একজন আধুনিক গুল্লু ভাইর দেখা পাইনি!

 

পাঠক মনে আছে নিশ্চয়ই পাকিস্তান সিরিজের পূর্বে দেশের মাটিতে শ্রীলংকার সাথে দুটি টেস্টে চরম বাজে ও গো হারা হারলাম আমরা। ক্রিকেটের পরিভাষায় যাকে বলে হোয়াইট ওয়াশ! হারজিত খেলার এক বড় অংশ আপনি কখনো জিতবেন কখনো হারবেন। বাংলাদেশের দুটি খেলার হারের ধরন আর খেলোয়ারদের মনমানসিকতা তাদের ব্যাটিংয়ের এপ্রোজ মোটেই আমার ভালো লাগেনি। ২৪ বছর টেস্ট ক্রিকেটে কাটানোর পর আমাদের দুই ক্রিকেটার দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন?  বিষয় টা আমাকে আরও ভাবিয়ে তুলে।

 

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান খুব স্ট্যান্ডার্ট না এটা সবাই স্বীকার করবে। এদেশের একটা ছেলে মোহাম্মদ আশরাফুল  মাত্র ১৬ বছর ৩৬১ দিন বয়সে বিদেশে মাঠিতে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করতে পারে, জাবেদ ওমর বেলিম গুল্লু নামে একজন ক্যারি দ্যা ব্যাটিং মানে ওপেনিং নেমে অপরাজিত থেকে ১০৩ বছরে টেস্ট ক্রিকেটের রেকর্ড ভেঙে দিতে পারেন। তাহলে এতো বছর পেরিয়ে আপনারা কেন সেটা পারছেন না? একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়!

 

ঘরের মাঠে আমরা শ্রীলংকার সাথে এমন বাজেভাবে হারার পর বর্তমান নির্বাচক প্যানেলের প্রধান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ভাই গণমাধ্যমে অবশেষে একটা সত্য কথা বলেছেন, সিলেট আর চট্টগ্রাম টেস্ট আমরা প্লেয়িং লেভেল ফিল্ড রেখেছিলাম, কোন হোম এডভান্টেজ নেওয়া হয়নি। আর তাতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের আসল চিত্র ফুটে উঠে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অপারেশন কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন ভাই আরও ভয়াভহ সত্য বলেছেন, শ্রীলংকা যাদি ৫০০ রান করতে পারে আমরা তো ৪০০/৪৫০ করতাম। যার মানে আমরা হারি কিন্তু প্রতিদ্বন্দীতাই তো করতে পারিনি! এককথায় বুঝা যায় তিনি খুব শকড বা কষ্ট পেয়েছেন।

 

আর সদ্য পাশের দেশ ভারতে প্রায় একই কন্ডিশনে আমরা সেখানে গিয়ে কি করলাম? চরম বাজে ভাবে হারলাম। শুধু হারই নয় বাংলাদেশ কোনভাবে দাড়াতেই পারিনি!

চেন্নাই টেস্টে টাইগারদের বিপক্ষে ২৮০ রানের বিশাল জয় পেয়েছে ভারত। প্রথম ইনিংসে অশ্বিনের পর দ্বিতীয় ইনিংসে গিল-পান্তের জোড়া সেঞ্চুরির সুবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে রানের পাহাড় দাঁড় করায় স্বাগতিকরা। সেইসাথে বল হাতেও সফল ছিলেন অশ্বিন, ভালো করেছেন বুমরাহও। টাইগারদের পক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে শতরান আসেনি একটিও। তবে বল হাতে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে আশার সঞ্চার করেছিলেন হাসান মাহমুদ। শেষ পর্যন্ত দলীয় ব্যর্থতায় বড় পরাজয় বরণ করতে হলো নাজমুল শান্তর দলের।

 

আর কানপুর টেস্টের কথা যদি বলি সেটা আরও ভয়াবহ! ভারত বাংলাদেশকে মাত্র আড়াই দিনে হারিয়ে রেকর্ডও গড়েছে ভারত। এর আগে গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে চতুর্থ ইনিংসে সবথেকে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ছিল ৮২ রানের। ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় পেয়েছিল ভারত। এবার বাংলাদেশ ১৩ রান বেশি টার্গেট দিলেও সেটা স্বাগতিকদের জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি।

অথচ এই ভারত আর শ্রীলংকা টেস্টের মধ্যেই পরাশক্তি পাকিস্তানকে দুই টেস্টেই হারিয়ে আমরা খুব আকাশে উড়ছিলাম! অনেকেই মনে করেছিলেন এই বুঝি টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সুদিন ফিরে আসবে। তবে এই জয় ফ্লুক কিনা এ নিয়ে  আমার একটা ডাউট ছিল এখানে। পাকিস্তান জয়ে সকল খেলোয়াড় আর আমাদের সাধারণ সমর্থকদের মনে একটা ফেইক কনফিডেন্সে দিয়ে ভারত সফর কি করে আর সুখের হয়!

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এই করুণ পোস্টমর্টেমের পর বিসিবি একটা বড়সড় উদ্যােগ গ্রহন করবে বা করেছেন আপাতত সেটা খুব দৃশ্যমান নয়।

সরকারের পতনের সাথে সাথে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এসেছে বড়সড় পরিবর্তন বিসিবি বস এখন ফারুক আহমেদ। তার হাত ধরে দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে এই বিশ্বাসটা যে রাখবো কিন্তু সে – আশা-ভরসার জায়গায়ও গুড়েবালি.! এই লেখা যখন লিখছি তখন ইতিমধ্যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভারতের সামনে সেফ উড়ে গেছে বাংলাদেশ। কথার কথা অথচ এই ফরমেটে বাংলাদেশের ভালো খেলার কথা। কিন্তু ঠিক এখানে ঘটছে তার উল্টো। ক্রিকেটে ভালো ফল পেতে হলে বিসিবি বস ফারুক আহমেদের করনীয় বা পরিকল্পনা কি সেটা আগে নির্ধারণ করতে হবে।

 

দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বা করণীয় যাই করেন না কেন নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে মাথায় রাখা প্রয়োজন। যেমন, ঘরোয়া ক্রিকেটের মান আরও স্ট্যান্ডার্ট করতেে হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে নতুন কিউরেটর ও মাটি এনে আধুনিক মানসম্মত বাউন্সী পিস করতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৪ দিনের ম্যাচ ও ম্যাচ ফি বাড়ানো এর পাশাপাশি ভেন্যু বাড়াতে হবে, ক্রিকেটারদার জন্য ভালো আবাসনের ব্যবস্থা ও তাদের যাতায়াত ভাতা বৃদ্ধি করা। প্রতিটি দলের সাথে ভালো কোচিং প্যানেল, একজন মনোবিদ থাকবেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতিটি খেলা টিভিতে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা। সাধারণত মনে করা হয় টেস্ট ক্রিকেট হলো ক্রিকেটের গ্রামার বা ব্যাকারন তাই আপনি যদি এখানে উন্নতি করেন তাহলে সব ফরমেটে সফল হবেন।

 

দেশের একমাত্র যে বড় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয় সেটা বিপিএল। তাই এখানে আরও পেশাদারিত্ব নিয়ে আসতে হবে। আইপিএলের আদলে হোম এন্ড অ্যায়ে ভিত্তিক পদ্ধতিতে যেতে হবে। এর পাশাপাশি শুধুমাত্র দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে আরেকটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। প্রতিটি জেলা ও বিভাগে নিয়মিত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগ চালু রাখতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় উপজেলা পর্যায়ে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা এবং এর পাশাপাশি  আম্পায়ারিং এর মানও বাড়াতে হবে। বাস্তবিক অর্থে যদিও এই সবগুলোর বাস্তবায়ন অনেক চ্যালেঞ্জিং  তারপরও ক্রিকেটের উন্নতির স্বার্থে আমাদের দ্রুত এই উদ্যােগ গ্রহন করতে হবে।

আর যদি এগুলোর দ্রুত উদ্যােগ গ্রহন করা না হয় তখন দেশের ক্রিকেট সত্যি সত্যি ইয়া বড় এক গোল্লায় পরিনত হবে। বিসিবির শুভ বুদ্ধির উদয় হোক আর দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাক।

লেখক: সাংবাদিক

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
themesba-lates1749691102